সহজেই প্রচুর কাজ পান ফাইভার মার্কেটপ্লেসে।

 

অনলাইন মার্কেটপ্লেস হিসাবে আমরা ওডেস্ক, ইল্যান্স, ফ্রিল্যান্সার ইত্যাদি নামগুলোর সাথেই বেশি পরিচিত। এসব মার্কেটপ্লেসে বায়ার জব টিউন করে, ফ্রিল্যান্সাররা বিড/আবেদন করে। এসব সাইটে নুতন ফ্রিল্যান্সারদের বেশ প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হয়। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে সহজে কাজ পাওয়ার জন্য নুতন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ভিন্ন ধারার বেষ্ট অনলাইন মার্কেটপ্লেস Fiverr 
ফাইভার (fiverr.com) ইতিমধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস হিসেবে সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এ মার্কেটপ্লেসে গিগ রেট ৫ ডলার দেখে অনেকে কাজ করতে কম উৎসাহিত হয়। আসলে বিষয়টি এরকম না। এ মার্কেটপ্লেসে কাজ করে অনেকে প্রতিমাসে গড়ে ১৫০০ ডলারও আয় করছে।যেহেতু বায়ার নয়, বড়ং ফ্রিল্যান্সাররাই কাজের অফার টিউন করে এবং বায়ার উক্ত অফার কিনে নেয়, প্রতিটি অফার বা গিগ (এখানে প্রতিটি কাজকে গিগ বলা হয়) এর মূল্য মাত্র ৫ ডলার হওয়ায় গিগগুলো দ্রুত সেল হতে থাকে। এজন্য দেখা যায়, অনেকে ওডেস্ক/ইল্যান্সে সুবিধা করতে পারছেন না, কিন্তু ফাইভার থেকে ভাল আর্ন করছেন।

কেন নুতন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ফাইভার বেষ্ট?

১. নুতন ফ্রিল্যান্সাররা অনেক সময় কাজে হাইলি স্কিলড হওয়া সত্বেও বিভিন্ন টেকনিক্যাল কারনে ওডেস্ক/ইল্যান্সে কাজ হারাতে পাড়েন। (অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সাররা উক্ত টেকনিক্যাল সমস্যাগুলো ওভারকাম করতে পারে) এজন্য ফাইভারে যেহেতু একজন ফ্রিল্যান্সার নিজেই কাজের অফার/গিগ টিউন করেন, ফলে সহজে কাজ পেতে পারেন। আমি মনে করি ফাইভার হতে অনেকের বিশেষ করে নতুনদের স্বপ্ন পূরণের এবং আত্মবিশ্বাসী হওয়ার মার্কেটপ্লেস। এখানে অনেক সুযোগ আছে নতুনদের কাজ পাওয়ার।

২. ফাইভারের স্লোগান ৫ ডলারের হলেও ফাইভার আসলে শুধু ৫ ডলারের নয়। আসল সত্যি হচ্ছে ফাইভা্রে ৫ ডলারের নিচে কোন কাজ নেই।অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, একটি কাজ করে মাত্র ৫ ডলার! আসলে হিসাবটা এমন নয়, এখানে কাজগুলো মূলতঃ ছোট ছোট ও সহজ এবং একটি অফার/গিগ শত সহশ্রবার বিক্রি হয়ে থাকে; ধরুন, আপনি ফটোশপে করা একটি ব্যানার ডিজাইন এর গিগ অফার করলেন, যদি এটি ৫০০ বার বিক্রি হয় তবে (৫০০X৪) ২০০০ ডলার আয় হবে একটি মাত্র গিগ অফার থেকে। ফাইভারে যারা প্রফেশনালি কাজ করে তারা এসব কাজের টেমপ্লেট/মকআপ পূর্বেই প্রচুর পরিমানে করে রাখে। ফলে একটি কাজকেই সামান্য মডিফাই করে ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন বায়ারকে প্রদান করে। মূলতঃ কাজ করতে করতে আপনিও প্রফেশনাল হবেন, বহু অ্যাডভান্স টেকনিক আপনিও শিখে ফেলবেন। তখন আপনিও বুঝতে সক্ষম হবেন, কিভাবে ২ দিন এর কাজ ২ ঘন্টায় ডেলিভারি দেওয়া যায়।

৩. ফাইভারে বিড করার কোন ঝামেলা নেই তাই বিড করা নিয়ে নতুনদের যে ভয় সেটা থাকছে না। তাছাড়া বিড করার জন্য সময়টাও আপনার ব্যয় হচ্ছে না।

৪. এখানে আপনার বায়ারকে খুজতে হবে না, বায়ার আপনাকে খুজে নিবে। ঠিক বাসায় "টু-লেট" বিজ্ঞাপন দেওয়ার মত। যার বাসা ভাড়া দরকার বাকিটা সেই বুজবে।
৫. ফাইভারের ফিল্টারিং এমনভাবে করা যাতে থাকছে সবার জন্য সমান সুযোগ।
৬. এখানে বিড করার কোন পথ না থাকলেও আপনি বায়ার রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারেন যা এক প্রকার বিড বলার যায়। তারমানে হচ্ছে এখানে দুই ধরণের পথই খোলা থাকছে আপনার জন্য।
৭. ফাইভারে প্রচুর পরিমাণে কাজ পাওয়া যায়। যদি অধিকাংশ কাজই ছোট ছোট কিন্তু ভুলে যাবেন না ছোট ছোট বালুকণা দিয়েই এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে।

কোন ধরনের গিগ গুলো ফাইভারে বেশি বিক্রি হয়?

সাধারণত ক্রিয়েটিভ ধরনের গিগগুলো বেশি বিক্রি হয়। ক্রিয়েটিভ গিগের উদাহরণ। যেমনঃ
voice narration, video creating, bizarre services, proofreading, content creation like blog posts, artwork creation like sketches or logos, a lot of computer services like fixing WordPress or programming in .NET, etc

কিভাবে গিগ কে সার্চের ফলাফলের প্রথমে রাখব?

কোন বায়ারের যখন কোন সার্ভিস দরকার হয়, তখন ফাইভারে গিয়ে সার্চ করে। তখন সার্চের প্রথম দিকে আপনার গিগটিকে পাওয়া গেলে বিক্রির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। গিগটিকে সার্চের ফলাফলের প্রথমে আনার জন্য টিপস শিখিয়ে দিচ্ছি।

১ম পদক্ষেপঃ

গিগ অপ্টিমাইজ করুনঃ
১) গিগের টাইটেলটি আকর্ষণীয় করুন। যাতে যে কেউ টাইটেলটা দেখেই ভিতরে গিয়ে পড়তে আকর্ষণবোধ করে। টাইটেলে অবশ্যই সার্চের সম্ভাব্য কীওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
২) ট্যাগের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য রিলেটেড কীওয়ার্ডগুলো ব্যবহার করুন।
৩) ছবি ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন কাউকে হঠাৎ করে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়, এরকম কিছু ব্যবহার করুন। গতানুগতিকের বাইরে গিয়ে ব্যতিক্রম কিছু করলেই সেটি মানুষকে আকর্ষণ করে। সুতরাং সে চেষ্টাটা করুন।
৪) গিগে যদি ভিডিও ব্যবহার করেন তাহলে সেক্ষেত্রে বিক্রির সম্ভাবনা ৬০% বেড়ে যায়। এটা ফাইভার অথোরিটি থেকেই বলা আছে। সুতরাং চেষ্টা করুন, ফাইভারের নিয়ম মেনে ভিডিও তৈরি করে সেটি গিগে ব্যবহার করার জন্য। গত বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, Fiverr ব্লগ থেকে জানা গেল যে, যেসকল গিগে ভিডিও ছিল তাদের সেল অনেক বেড়েছে। শুধু তাই নয় যে সকল সেলারের ভিডিওতে নিজেরাই নিজেদের কাজ উপস্থাপন করেছেন তাদের সেল বেড়েছে ৯৬% আর যাদের ভিডিও ইফেক্ট, এনিমেশন, লেখা, ষ্টীল ছবি, ইত্যাদির মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন তাদের সেল বেড়েছে ৮৪%। মিউজিক এবং অডিও ক্যাটাগরিতে যাদের ভিডিও ছিল তাদের সেল বেড়েছে অবিশ্বাস্য ভাবে ৪১৮%। সুতরাং গিগে ভিডিওর গুরুত্বটা পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে, আশা করি।

২য় পদক্ষেপঃ

গিগ অপ্টিমাইজ হয়ে গেলে এবার দুটি বিষয় নির্ভর করে সার্চে উপরে থাকার জন্য। এ দুটি বিষয় হচ্ছেঃ গিগ পপুলারিটি, গিগ রিভিউ।
১নং বিষয়ঃ গিগ পপুলারিটি অর্জনঃ
গিগের ভিতর যদি প্রচুর মানুষকে নিয়ে আসতে পারেন অর্থাৎ প্রচুর মানুষকে গিগটি পড়াতে পারেন তাহলেই সেই গিগের পপুলারিটি অর্জিত হয়। প্রচুর মানুষকে গিগটির লিংকে ক্লিক করানোর জন্য কিছু এস.ই.ও টিপস ব্যবহার করতে হবে।
সোশ্যালমিডিয়াতে ক্যাম্পেইনঃ
গিগটিকে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে (ফেসবুক, টুইটার, লিংকডিন, রেডিট ইত্যাদি) শেয়ার করুন।
গিগ সংশ্লিষ্ট ব্লগটিউনের মাধ্যমে গিগের লিংক প্রচারঃ
গিগটি যদি লোগো ডিজাইন সম্পর্কিত হয়ে থাকে, তাহলে আকর্ষণীয় লোগো ডিজাইনের উপর টিপস নিয়ে কোন ব্লগটিউন লিখে ফেলতে পারেন। এ টিউনটি প্রচুর মানুষ পড়বে, প্রচুর মানুষকে লেখাটি আকর্ষণও করবে। সেই টিউনের ভিতর যদি গিগের লিংকটি দিয়ে আসেন তাহলেও গিগটিতে অনেক ভিজিটর নিয়ে আসতে পারবেন।
এ দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করে গিগের পপুলারিটি বৃদ্ধি করুন।

২নং বিষয়ঃ গিগ রিভিউ বৃদ্ধিঃ

উপরের কাজগুলো করলে আশাকরা যায় খুব দ্রুত কিছু গিগ বিক্রির অর্ডার পেয়ে যাবেন। গিগ অনুযায়ি কাজ করে এবং সময়মত কাজ ডেলিভারি দিয়ে বায়ারের কাছ থেকে ভাল ফিডব্যাক সংগ্রহ করুন। যতবেশি ভাল ফিডব্যাক পাবেন, আপনার গিগ ততবেশি সার্চের উপরে উঠতে থাকবে।
পুরো টিউন অনুযায়ি কাজ করলে অবশ্যই ফাইভারে প্রচুর গিগ  বিক্রি করতে পারবেন।  এ টিউনটি পড়ে সফল হলে ফেসবুকে আমাকে জানাবেন আশা করি।  ভাল প্রস্তুতি, পরিকল্পিত প্রস্তুতি ছাড়া কাজ করলে সফল হতে পারবেননা, হলেও অনেক দেরী হবে।  সুতরাং সঠিকভাবে কাজ করুন, না হলে ব্যর্থ হলে ভাগ্যের দোষ দিয়ে লাভ নাই। ব্যর্থতার জন্য আপনার পদক্ষেপটাই দায়ী।

No comments:
Write comments

Note: Only a member of this blog may post a comment.

Translate

Follow Us

Sign up now

Get Dot com